শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১০ অপরাহ্ন

Notice :
সারা বাংলাদেশ ব্যাপী বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে..........চট্টগ্রাম অফিস: সৈয়দ নূর বিল্ডিং , এম এ আজিজ রোড, সিমেন্ট ক্রসিং, দক্ষিণ হালিশহর, চট্টগ্রাম।মোবাইল নাম্বারঃ ০১৯১১৫৩৩৩০৮, ০১৭১১৪৬৭৫৩৭, E-mail: gsmripon@gmail.com
সংবাদ শিরোনাম:
আলোচিত জসিম উদ্দিন হত্যামামলার মূলহোতাসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে সিএমপির বন্দর থানা পুলিশ। বাঙ্গালি জাতি মুক্তির জন্য যে সংগ্রাম করেছিল তা ইতিহাসে সংরক্ষণ করতে হবে যথাযথ মর্যাদায় ও উৎসবমুখর পরিবেশে চট্টগ্রামে বিজয় দিবস উদযাপিত খাগড়াছড়িতে ৭৭তম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালিত চোরাই তেল ক্রয়-বিক্রয় ও ডিবি পুলিশের ক্যাশিয়ার পরিচয়ে আলি গ্রেফতার বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ৪৭৫.২৫ কোটি টাকার চেক মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট হস্তান্তর। হযরত আব্দুল কাদের জ্বিলানী (রহঃ) সুন্নিয়া ফ্রি ফোরকানিয়া মাদ্রাসার উদ্ভোধন দক্ষিণ হালিশহর আকমল আলী সমূদ্র ঘাটে আগুনে পুড়েছে ৩৫ দোকান ঘর পাহাড়তলী থানার অভিযানে একটি দোনলা বন্দুকসহ দুইজন সন্ত্রাসী গ্রেফতার। সেন্টমার্টিনে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান ও প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রী বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড

এই কিরে তোর ভালোবাসার প্রতিদান,,??

এই কিরে তোর ভালোবাসার প্রতিদান,,,??

মোঃ কামাল উদ্দিন ঃ- চট্টগ্রাম

কাঁচা প্রেমের নিষ্ঠুর পরিণতি: পাঁচলাইশ পুলিশের দক্ষতায় উদঘাটিত হলো হৃদয়বিদারক ঘটনা,,

ভাঙা স্বপ্নের কান্না
সে ছিল একটি সাধারণ গার্মেন্টস কর্মী, কিন্তু তার জীবনের স্বপ্নগুলো ছিল অসাধারণ। কিশোরী বয়সেই সে পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছিলো, কিন্তু তার হৃদয়জুড়ে ছিলো ভালোবাসার স্নিগ্ধ এক ঝিলিক। প্রতিদিনের ক্লান্তিকর কাজ, রোদে পোড়া চামড়া, আর হাতের ছোট্ট কাটা দাগগুলোর ভেতর দিয়েও সে স্বপ্ন দেখতো একদিন তার জীবন বদলাবে, তার ভালোবাসা একদিন তাকে এই কঠোর বাস্তবতা থেকে মুক্তি দেবে।
তাদের পরিচয় হয়েছিলো এক বন্ধুর মাধ্যমে। ছেলেটি প্রথমে তার জীবনে আসলো এক আলোকিত স্বপ্নের মতো, তার হৃদয়ে রঙিন ফুল ফোটালো। মেয়েটি দিনরাত কাজ করলেও ছেলেটির একটি মেসেজ বা ফোনকলই তার সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দিতো। ছেলেটির প্রতিটি কথাই তার কাছে ছিলো পবিত্র, সত্য। সে কখনও কল্পনাও করেনি যে সেই কথাগুলোর পেছনে ছিলো এক ভয়ংকর ছলনা।
মেয়েটি ছেলেটির জন্য নিজের সবকিছু দিয়ে ভালোবাসতে শুরু করেছিলো। নিজের ক্ষুদ্র সঞ্চয় থেকে ছোট ছোট উপহার কিনে দিতো, আর ছেলেটির হাসি দেখে যেন তার হৃদয় আনন্দে ভরে উঠতো। সে কেবল ছেলেটির পাশে থাকার স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকতো। তার মনে হয়েছিলো, এই মানুষটিই হয়তো তার জীবনের পরিত্রাতা। কিন্তু একদিন, সেই ছেলেটির আচরণে পরিবর্তন আসে। মেয়েটি লক্ষ্য করলো, তার ফোনকল বা মেসেজের উত্তর সে আর আগের মতো পাচ্ছে না। হৃদয়ে ভয় জাগলেও, সে আশা করতো যে এটি হয়তো সাময়িক কোনো সমস্যা। কিন্তু আসল সত্য সে বুঝতে পারেনি। ছেলেটি আসলে তার জীবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলো, তার বিশ্বাসকে ভাঙছিলো প্রতিটি মুহূর্তে।
একদিন, ছেলেটি পুরোপুরি উধাও হয়ে যায়। মেয়ে ছুটে যায়, ছেলেটির বন্ধুবান্ধবের কাছে যায়, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারে না। মেয়েটির মনে হয়, তার জীবনটা যেন অন্ধকারে ডুবে গেছে। একসময়, সে জানতে পারে যে ছেলেটি অন্য একজনকে ভালোবাসে, আর সে ছিলো কেবল ছেলেটির মিথ্যা ভালোবাসার শিকার।
মেয়েটির মন ভেঙে যায়, তার পৃথিবীটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তারপরেও, সে সবকিছু ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভাগ্য তার দিকে নিষ্ঠুর হয়ে উঠে। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা আওতাধীন একটি এলাকায় সেই ছেলেটি একদিন নির্মমভাবে তার জীবনের উপর আঘাত হানে।
সেদিন সন্ধ্যায়, মেয়েটি ফিরে আসেনি। পুলিশ তার নিথর দেহ উদ্ধার করে, এবং সমাজে আরেকটি নিষ্পাপ প্রাণ ভালোবাসার নামে প্রতারিত হয়ে হারিয়ে যায়। এই ভালোবাসার অভিনয় ছিলো এতটাই নির্মম যে, সেই মিথ্যা ভালোবাসার ফলস্বরূপ মেয়েটিকে জীবন হারাতে হলো।
এই ট্র্যাজেডি কেবল একটি ভালোবাসার গল্প নয়, এটি একটি সমাজের প্রতিচ্ছবি। যেখানে মিথ্যা ভালোবাসা আর প্রতারণা মেয়েটির মতো হাজারও তরুণীর জীবনকে বিপর্যস্ত করছে। মেয়েটি আর ফিরবে না, তার স্বপ্নগুলো আর বাস্তব হবে না, কিন্তু তার কান্নার শব্দ হয়তো এখনও বাতাসে ভাসছে।
সত্যিকার ভালোবাসা মানুষকে জীবনের পথে এগিয়ে দেয়, শক্তি যোগায়। কিন্তু মিথ্যা ভালোবাসা আর প্রতারণা জীবনকে চিরতরে থামিয়ে দেয়। মেয়েটির জীবন যেন আমাদের কাছে একটি সতর্কবার্তা হয়ে থাকে—ভালোবাসার নামে প্রতারণা না করে, প্রকৃত ভালোবাসার সম্মান রাখি।
এতক্ষণ কিছু গল্প শুনিয়েছিলাম- চলুন আসল কথায়, কি যে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে এই সরল সোজা সামিরা নামে মেয়েটিকে- ঘটনার বিবরণঃ চট্টগ্রাম: নগরের পাঁচলাইশে ঘটে যাওয়া এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি এক অনিন্দ্যসুন্দর কিশোরীর নির্মম মৃত্যুতে পরিণত হয়েছে। মরিয়ম আক্তার সামিরা, মাত্র সতেরো বছর বয়সী একটি কিশোরী, যার সমস্ত স্বপ্ন হয়তো তখনও রঙিন হয়ে উঠেছিল, জীবন যাপনের প্রয়োজনে সে পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। একদিন ভালোলাগার সম্পর্ক, ভালোবাসার টানাপোড়েন এখন তাকে জীবনের মায়া থেকে মুক্তি দিয়েছে।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত রাজমিস্ত্রী মো. তারেক, মাত্র কুড়ি বছরের এক যুবক, যিনি সামিরার প্রেমিক হিসেবে পরিচিত। সম্পর্কের গভীরে নেমে আসা অবিশ্বাস ও অবিচ্ছেদের ছায়া তার মনকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে যে, সেই আবেগের প্রবল স্রোতে সে ভুলে যায় সকল মানবিকতা। ঘটনার দিন, শুক্রবার রাতের আঁধারে সামিরাকে দেখা করার জন্য ডেকে পাঠায় তারেক। এই রাত যেন ছিল তাদের সম্পর্কের জন্য শেষ সাক্ষী। দুজনের দেখা হওয়ার পর শুরু হয় তীব্র বাকবিতণ্ডা। প্রতিটি শব্দে মিশে ছিল তাদের অস্থিরতা, সন্দেহ, আর অভিমান। তারেকের মনে হয়, সামিরা তার ভালোবাসার সাথে প্রতারণা করেছে; হয়তো সে অন্য কারও দিকে মনোযোগ দিয়েছে। সেই দগ্ধ অনুভূতি, ভাঙা বিশ্বাসের অন্ধকার যেন তার মনকে পুরোপুরি গ্রাস করে। নিজের হাতেই এই অবিশ্বাসের কালো মেঘ সরাতে সে সামিরাকে আঘাত করে। এক ক্ষণিকের বেদনায় নিমেষেই থেমে যায় সামিরার জীবন। গলায় ছুরির আঘাতে কিশোরীর জীবনের শেষ স্পন্দনটুকু কেঁপে উঠে, রাতের অন্ধকারে হারিয়ে যায় তার সমস্ত স্বপ্ন।
হত্যাকাণ্ডের পর তারেক দ্রুত পালিয়ে যায়। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের অন্ধকার কিছুতেই তাকে লুকিয়ে রাখতে পারেনি। পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে রাত তিনটার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। তারেকের দেয়া তথ্যমতে উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি এবং সামিরার পরিহিত স্যান্ডেলের জোড়া। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারেক নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে, সে জানিয়েছে যে ক্রোধ ও হিংসার আগুন তাকে এমন এক পথে নিয়ে গিয়েছিল যেখানে সে সামিরাকে আর জীবিত থাকতে দেয়নি। ঘটনার পর সামিরার ভাই মো. পারভেজ উদ্দিন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন।
এই ঘটনার পেছনে লুকিয়ে থাকা যন্ত্রণার স্পর্শে কেঁদে উঠছে সামিরার পরিবার, এলাকাবাসী। সামিরার মায়ের চোখে অশ্রু শুকিয়ে গিয়েছে, কিন্তু তবু বুকের ভেতর সেই শূন্যতা রয়ে গিয়েছে, যা কিছুতেই পূর্ণ হবে না। তারেকের জন্য কি অপেক্ষা করছে, তা সময়ই বলে দেবে, তবে সামিরার হারানো জীবনের ক্ষত কখনোই মুছে যাবে না।এমন একটি ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ভালোবাসা কখনোই যেন ক্ষোভ ও হিংসার পথে না চলে যায়। যে সম্পর্ক একসময় ভালোবাসা দিয়ে গড়ে উঠেছিল, সেই সম্পর্কই আজ সহিংসতায় রূপ নিয়ে একটা প্রাণের অকাল মৃত্যু ঘটিয়েছে। চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমানের দক্ষ নেতৃত্ব এবং তার নিবেদিত পুলিশিং ভূমিকার কারণেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের আসামি দ্রুত গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। তারেককে গ্রেপ্তারের জন্য তিনি যে ধৈর্য ও কৌশল প্রদর্শন করেছেন, তা পুলিশ বাহিনীর প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি এবং গোপন সূত্রের সহায়তায় রাত জেগে অভিযান পরিচালনা করে আসামিকে ধরতে সক্ষম হয়েছে। এমন পেশাদারিত্বের জন্য মোহাম্মদ সোলাইমান এবং তার টিমের প্রশংসা করতেই হয়।
এই ঘটনার শিক্ষা আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে তরুণদের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা। সম্পর্কের ভিত্তি যদি হয় সন্দেহ এবং হিংসা, তবে তা কেবল ক্ষতি ও ধ্বংসই ডেকে আনে। সঠিক সময়ে এবং জীবনের উপযুক্ত পর্বে প্রেম ও সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। খুব কম বয়সে আবেগের প্রাবল্যে নেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে, এই ঘটনায় তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তরুণদের প্রতি পরামর্শ—আপনারা জীবনের শুরুতে পড়াশোনা ও ব্যক্তিগত উন্নতির দিকে মনোযোগ দিন। ভালোবাসা অবশ্যই জীবনের অপরিহার্য একটি অংশ, তবে তার সঠিক সময়ে আসা প্রয়োজন। তাড়াহুড়ো করে, অপরিপক্ক আবেগে চালিত হয়ে এমন সম্পর্কে জড়াবেন না, যা আপনাদের নিজস্বতা এবং জীবনযাপনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। জীবন এক অমূল্য সম্পদ, যা কোন ধরনের উত্তেজনা বা ক্ষোভের কারণে হঠাৎ শেষ করে দেওয়া উচিত নয়।
তাই সচেতন হোন, ধৈর্য ধরুন এবং পরিপূর্ণ জীবন গঠনের দিকে মনোযোগ দিন।
লেখক সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2023 Channel69tv.net.bd
Design & Development BY ServerNeed.com